RIFF Leather Limited

চামড়ায় সুখবর আনল এক কারখানা

দেশের প্রথম ট্যানারি (ওয়েট ব্লু) হিসেবে রিফ লেদার বৈশ্বিক মানসনদ পেয়েছে। ফলে প্রক্রিয়া করা দেশি চামড়া কিনতে পারবে বড় ব্রান্ড।

বাংলাদেশের চামড়ার জন্য সুখবর। চট্টগ্রামভিত্তিক টি কে গ্রুপের ট্যানারি রিফ লেদার চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংগঠন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) মানসনদ পেয়েছে।

এই মানসনদের সুবিধা হলো, রিফ লেদারের প্রক্রিয়া করা চামড়া অথবা সেই চামড়া থেকে তৈরি পণ্য বিশ্বের যেকোনো নামী ব্র্যান্ড কিনতে পারবে, সেটা কোন ধরনের দ্বিধা ছাড়াই ।

একটু বুঝিয়ে বলি, পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশি চামড়া বা দেশি চামড়ার পণ্য কোন বড় ব্রান্ড কেনে না । কারন পরিবেশ দূষণের সঙ্গে যোগ থাকলে তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।

লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির সদস্য বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের সংখ্যা ৯৫টি। এসব ব্র্যান্ড যখন কোনো উৎপাদকের কাছ থেকে চামড়াজাত পণ্য কেনে, তখন শর্ত দিয়ে দেয় যে চামড়াটি এলডব্লিউজি সনদপ্রাপ্ত ট্যানারি থেকে প্রক্রিয়া করা হতে হবে। বাংলাদেশে এত দিন চামড়া প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপ বা ওয়েট ব্লু করার মতো এলডব্লিউজি সদনপ্রাপ্ত কোনো ট্যানারি ছিল না।

অবশ্য দেশে প্রথম এলডব্লিউজি সনদ পায় আ্যাপেক্স ফুটওয়ারের ট্যানারি ইউনিট, ২০১৫ সালে। তারা নিরীক্ষায় সেরা মান অর্থাৎ গোল্ড কারখানারমর্যাদা অর্জন করে। আ্যাপেক্স চামড়া প্রক্রিয়াকরণের দ্বিতীয় ধাপ ‘ক্রাস্ট’ ও তৃতীয় ধাপ “ফিনিশড’ পর্যায়ে কাজ করে। প্রথম ধাপে ওয়েট ব্লুর কাজ করে না। গত বছর অস্টন লিমিটেড নামে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের আরেকটি ট্যানারিও এলডব্লিউজি সনদ পায়। সেটিও ওয়েট ব্লুর কাজ করে না।

রিফ লেদার চামড়ার ওয়েট ব্লু, ক্রান্ট ও ফিনিশড পর্যায়ের জন্য এলডব্লিউজির সনদ পেয়েছে। ওয়েট ব্লু পর্যায়ে তরল বর্জ্য বেশি উতপাদিত হয়।

রিফ লেদারটি চট্টগ্রামের কালুঘাটের সিডিএ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় অবস্থিত। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, এটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত। তবে কর্মকর্তারা জানান, ইটিপি তৈরি হয় তিন বছর আগে। আর গত ডিসেম্বরে এলডব্লিউজি তাদের নিরীক্ষা করে। কয়েক মাস আগে নিরীক্ষা সনদ পাওয়া যায়।

সূত্রঃ প্রথম আলো

দেড় একর জমিতে এই ট্যানারির ওয়েট ব্লু উৎপাদন ক্ষমতা মাসে ১৫ লাখ বর্গফুট। একেকটি চামড়ার আকার গড়ে ২৫ বর্গফুট ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, কারখানাটি মাসে ৬০ হাজার মাঝারি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। ক্রাস্ট ও ফিনিশড পর্যায়েও তাদের উৎপাদন ক্ষমতা মাসে ১৫ লাখ বর্গফুট করে। সব মিলিয়ে কারখানাটির উৎপাদন ক্ষমতা মাঝারি পর্যায়ের।

রিফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, “এ সনদ পাওয়ার পর অনেকেই আমাদের কাছ থেকে চামড়া কেনার জন্য যোগাযোগ করছে। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান আগে পণ্য তৈরি করতে ভারত থেকে চামড়া আমদানি করত। এখন রিফের কাছ থেকে নেবে বলে জানিয়েছে।”

রিফ লেদার জানায় তাদের বর্জ্য পরিশোধনাগারের (ইটিপি) স্থাপনা তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো। আর এটির নকশা করেছে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান, যার নাম এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ইজাজ হোসেন খান বলেন,“এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার উপযোগী ইটিপি তৈরি করার মতো কারিগরি জ্ঞান আমাদের আছে। “বিশ্বে এলডব্লিউজি সনদপ্রাপ্ত চামড়া উৎপাদনকারীর সংখ্যা ৫৩টি। এর মধ্যে পাশের দেশ ভারতে ১৩৯, চীনে ১০৩, ইতালিতে ৬৮, ব্রাজিলে ৬০, তাইওয়ানে ২৪, স্পেনে ১৭, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরক্কে ১৬ ও ভিয়েতনামে ১৪টি উৎপাদনকারী রয়েছে। বাংলাদেশে সাকুল্যে তিনটি।

এলডব্লিউজি ট্যানারি অব দ্য ফিউচার সাব-গ্রুপের কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ থেকে ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম কোনো চামড়াজাত পণ্য নেয় না। টিম্বারল্যান্ড, ক্লার্কসের মতো ব্রান্ডের জন্য পণ্য তৈরি করতে চামড়া আনতে হয় বিদেশ থেকে। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ চামড়া উৎপাদনকারী দেশ।

দেশে চামড়া খাতে সচল ট্যানারির সংখ্যা এখন ১৩০টির মতো। ট্যানারিকে পরিবেশবান্ধব করতে শিল্প মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে সাভারের চামড়া শিল্পনগর তৈরির প্রকল্প নেয়। চারবার সংশোধন করে সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে, ১ হাজার ১৯ কোটি টাকা। ১৭ বছরেও এটির কাজ শেষ হয়নি। বরং উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ২০১৭ সালে অপ্রস্তত অবস্থায় ট্যানারিগুলোকে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে নেওয়া হয়। এতে এখন বুড়িগঙ্গার পরে দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। ২০১২ সালে শুরু হলেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ এখনো শেষ হয়নি।

সাভারে বিপুল বিনিয়োগ করে বিপাকে থাকা অ্যাপেক্স, বে-সহ কয়েকটি ট্যানারি সরকারের কাছে আলাদাভাবে ইটিপি করার অনুমতি চেয়েছিল, যারা স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে। অন্য ট্যানারি মালিকদের বিরোধিতায় তারা সেটা পায়নি।

ওদিকে চামড়া খাত ডুবছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি আয় ছিল ১২৩ কোটি ডলার। চামড়া ছিল দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্য। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া খাতে রপ্তানি আয় নেমেছে ৮০ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের চেয়েও ২২ শতাংশ কম।

জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোমেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যদি চার-পাঁচটি বড় ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদপ্রাপ্ত হতো, তাহলে বিদেশ থেকে অনেক দাম দিয়ে চামড়া আমদানি করতে হতো না। দেশের কাচা চামড়াও রপ্তানির চিন্তা করতে হতো না।

সূত্রঃ প্রথম আলো

1 thought on “চামড়ায় সুখবর আনল এক কারখানা”

Comments are closed.